বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম হয়নি, জনগণ রক্ত দেয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি ইসরাইলেও পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হয়। ইসরাইলের সেই পিআর পদ্ধতি কেন আলেম, উলামা ও পীরদের আদর্শ হলো সেটা বুঝে আসে না।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজার বিএনপি কার্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শোক, বর্ষপূর্তি ও শহিদদের স্মরণে ড্যাবের রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আওয়ামী ফ্যসিবাদবিরোধী ১৫ বছরের গণতন্ত্রের লড়াই ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও পঙ্গুত্ব বরণকারীরা আমাদের জাতীয় বীর। তাদেরকে যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়া রাষ্ট্র ও জনগণের দায়িত্ব। জনগণের রায় নিয়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও পঙ্গুত্ববরণকারীসহ বিগত ১৫ বছরের গুম খুনের শিকার ব্যক্তিরা প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, ভোটের সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য নির্বাচনের কোনও কোনও মহলের দাবির কথা উল্লেখ করে বলেন, জনগণ সংখ্যানুপতের ভিত্তিতে নয়, জনগণ সরাসরি প্রার্থী, মার্কা, দল দেখে ভোট দিতে চায়। অপ্রাসঙ্গিক, অযৌক্তিক দাবি করে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা ,জটিলতা সৃষ্টি না করে জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে গণতন্ত্রের লক্ষ্যে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।
নেতাকর্মীদের প্রতি বিএনপির এ নেতা বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করেন। নেতাকর্মীদেরকেও সেই আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করে পরিবর্তনের মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। জনগণ কষ্ট পায় বা পছন্দ করে না, এমন কাজ থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘কী পেলাম’ তা চিন্তা না করে দেশ ও জনগণকে কী দিলাম বা দিতে পারছি তা বিবেচনা করে রাজনীতি করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সময় অনেক গুলিবিদ্ধ ও আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে রক্তের ও সুচিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। আওয়ামী চিকিৎসকদের অমানবিক আচরণে সরকারি হাসপাতালে আহতরা বিপর্যস্ত হয়েছে। চিকিৎসক নামের কলঙ্ক তারা। আমরা অমানবিক নই, সেজন্য প্রতিহিংসা নয় মানবিকতা দিয়ে তাদের দিকে তাকাব। তবে তাদেরকেও সংশোধন হতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, বিএনপিকে ঘায়েল করতে কিছু ছোট রাজনৈতিক দল জুলাই চেতনার পরিপন্থি কাজ করছে। জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বিএনপি অনেক ছাড় দিয়েছে। তবে ছাড়ের নামে জনগণের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ বিএনপি মেনে নেবে না। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে, রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সেই গুরু দায়িত্ব বিএনপিকেই নিতে হবে। সে জন্য আমাদের কাছে সবার আগে দেশপ্রেম, সবার আগে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে হবে।
প্রিন্স বলেন, সেই মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে। মানুষ যেন কষ্ট না পায়, এমন কোন কাজ করা আমাদের কারোরই উচিত হবে না। ব্যক্তিগত পাওয়া না পাওয়ার বিবেচনায় নয়, আমি জনগণকে কি দিচ্ছি, কি দিতে পেরেছি, কি দিতে পারব। সেই চিন্তা করে আমাদের রাজনীতি করতে হবে। তাহলেই জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা আমাদের নেতা তারেক রহমান ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও তুলে ধরেছেন, সেখানেই আমাদের বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সম্মিলিত আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা ফ্যাসিবাদকে হঠাতে পেরেছি। সে আন্দোলনের যে সুফল তা, আমরা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের কে ধীর গতিতে নয়, দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। সেজন্য আজকে যারা ড্রাইভিং সিটে আছে অন্তর্বর্তী সরকার ড. মো. ইউনূস, তাদের এ গাড়িকে দ্রুত গতিতে গন্তব্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের উপর পড়েছে। আমরা আশা করব এ গাড়িকে দ্রুত তারা গতিতে এগিয়ে নেবে।
অনুষ্ঠানে ডক্টর’স অ্যাসোসিয়েশনের (ড্যাব) জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম মুসা শাহীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোতাহার হোসেন তালুকদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম।
এ সময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।